যশোরের কেশবপুরে ভয়াবহ বন্যা ও জলাবদ্ধতায় কৃষি জমিতে সার ব্যবহার না হলেও আসন্ন রবি মৌসুমের শুরুতে ডিলাররা কৃত্রিম সংকট দেখিয়ে বেশি দামে মৎস্য ঘের মালিকদের কাছে সার বিক্রি করছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
এছাড়া, বিসিআইসি সার ডিলার নিয়োগে নীতিমালা উপেক্ষা করা সহ নানাবিধ অভিযোগ রয়েছে পাইকারী সার বিক্রেতাদের বিরুদ্ধে। ফলে খুচরা সার ব্যবসায়ীদের পরিবহণ খরচ বেশি হওয়ায় প্রভাব পড়ছে কৃষকদের উপর।
কৃষি অফিস জানিয়েছে, পৌরসভাসহ উপজেলায় ১৩ জন বিসিআইসি ডিলার, ২৬ জন বিএডিসি ও প্রতি ওয়ার্ডে ১ জন করে সরকার অনুমোদিত খুচরা সার বিক্রেতা রয়েছেন। চলতি বছরের জুলাই থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত বিসিআইসি, বিএডিসি ও আমদানীসহ পাইকারী ব্যবসায়ীরা ৩ হাজার ৭৭০ টন ইউরিয়া, ৯০৭ টন টিএসপি, ২ হাজার ৫০ টন ডিএপি ও ৯৬০ টন এমওপি সার দুই কিস্তিতে উত্তোলন করেন। সরকার নির্ধারিত প্রতি কেজী ইউরিয়া ২৭ টাকা, টিএসপি ২৭ টাকা, ডিএপি ২১ টাকা ও এমওপি ২০ টাকা মুল্যে বিক্রি করার কথা রয়েছে।
বিসিআইসি সার ডিলার নিয়োগ ও সার বিতরণ সংক্রান্ত সমন্বিত নীতিমালা-২০০৯ এর ৩.২ উপধারায় উল্লেখ রয়েছে, নিজ মালিকানায় অথবা ভাড়ায় ইউনিয়ন পরিষদ/পৌরসভায় বিক্রয় কেন্দ্রসহ কমপক্ষে ৫০ টন ধারণ ক্ষমতা সম্পন্ন গুদাম ঘর থাকতে হবে। এ নীতিমালা উপেক্ষা করে প্রান্তিক কৃষকদের সুবিধার্থে আরও ২৬ জন বিএডিসি ডিলার ও কৃষি বিভাগ প্রতিটি ওয়ার্ডে ১জন করে খুচরা সার বিক্রেতা নিয়োগ দেয়। তার পরেও সরকার নির্ধারিত মুল্যে মিলছে না সার। খুচরা বিক্রেতাদের অভিযোগ, গত ১৫ বছর ধরে এক ডিলার একাধিক লাইসেন্সের সার উত্তোলন করে সিন্ডিকেটের মাধ্যমে ভরা মৌসুমে বাজারে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে চড়া দামে বিক্রি করে আসছেন।
বিসিআইসি ও বিএডিসি ডিলাররা বলেন, নির্ধারিত মূল্যেই তারা সার বিক্রি করছেন। তবে কৃষকদের কাছে তিউনিশিয়া ফসফেটের চাহিদা বেশি থাকায় বাজারে সংকট থাকে বলেই বাইরে থেকে কিনতে হয়। অন্যান্য সারের কোনো সংকট নেই।
ভালুকঘর গ্রামের কৃষক সোহবার হোসেন বলেন, আমন মৌসুমে তার ৩০ বস্তা সার কিনতে হয়। বন্যার ফলে এবার কোন সার কিনতে হয়নি। এরপরও বোরো মৌসুমের শুরুতে ইউরিয়া ৩০ টাকা, টিএসপি ৩০ টাকা ও এমওপি ২২ টাকা দরে কিনতে হচ্ছে। রাতের আধারে এ সব সার চলে যাচ্ছে ঘের মালিকদের কাছে।
উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা সুদীপ বিশ্বাস বলেন, ঘেরে শতকে ২০০ গ্রাম করে সার ব্যবহারের নীতিমালা থাকলেও ঘের মালিকরা ১ থেকে দেড় কেজি করে প্রয়োগ করেন। এ কারণে তাদের চড়া দামে সার কিনতে হয়। এতে সারের সংকট হতে পারে।
উপজেলা কৃষি অফিসার মাহমুদা আক্তার বলেন, সারের কোনো সংকট নেই। ডিলারদের গুদামে সার মজুদ রয়েছে। সরকার মরক্কো ও তিউনিশিয়ার টিএসপি আমদানি করে থাকে। দুটিরই গুণগত মান একই হলেও কৃষকদের কাছে তিউনিশিয়ার টিএসপির চাহিদা বেশী। এ কারণে এ সারের সাময়িক সংকট দেখা দিতে পারে। সারের সংকট মোকাবিলায় উপজেলায় মনিটরিং এর ব্যবস্থা করা হয়েছে।