শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ৪ ওভারে ২২ রানে ৩ উইকেট নেন রিশাদ।
মিরপুর স্টেডিয়ামের গ্র্যান্ড স্ট্যান্ড টপকে বল আঘাত করল বিসিবি অফিসের এক পরিচালকের কক্ষের জানালার কাচে। ঝুরঝুর করে ঝরে পড়ল কাচের টুকরা। মুহূর্তে হৈচৈ পড়ে গেল, ‘এত বড় ছয় কে মারল?’ ঘটনাটি ২৮ অক্টোবর ২০১৯ সালের। ভারত সফরে যাওয়ার আগে ক্যাম্পে ডাক পাওয়া ক্রিকেটাররা ভাগ হয়ে খেলা প্রস্তুতি ম্যাচে।
১৭ বছরের রিশাদ হোসেন তখন যুবদলের সদস্য। খোঁজখবর নিয়ে জানা যায়, তার মূল পরিচয় বোলার। সে সময় বিসিএলে নিজের প্রথম ম্যাচ খেলতে নেমে ৫ উইকেট নিয়ে তৎকালীন স্পিন বোলিং কোচ ড্যানিয়েল ভেট্টরির চোখে পড়েন এই লেগ স্পিনার। তখন একজন লেগ স্পিনারের খোঁজে হয়রান বাংলাদেশ দল।
পাঁচ বছর পর সেই আক্ষেপ কি ঘোচাতে পারলেন রিশাদ?
তখন থেকে রিশাদ জাতীয় দলের ছায়াসঙ্গী। গত বছরের মার্চে অভিষেক হয় তার। এক বছরের ক্যারিয়ারে ১৭টি টি-টোয়েন্টি খেলা এই তরুণ গতকাল বিশ্বকাপে বাংলাদেশের প্রথম স্বীকৃত লেগ স্পিনার হিসেবে খেলতে নেমে জেতেন ম্যাচসেরার পুরস্কার। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে বাংলাদেশের ২ উইকেটে জেতা ম্যাচে ৪ ওভারে ২২ রানে নেন ৩ উইকেট, ধসিয়ে দেন লঙ্কান মিডল অর্ডার।
তাতে ঘুরে যায় ম্যাচের ভাগ্য। রিশাদে মুগ্ধ অধিনায়ক নাজমুল হোসেন বলেন, ‘অসাধারণ বোলিং করেছে। গত কয়েক সিরিজ ধরেই ভালো করে আসছে। ওর প্রস্তুতি খুবই ভালো।’
ডালাসের মন্থর উইকেটে তখন রান-প্যাডলে পা শ্রীলঙ্কার।
১৪ ওভার শেষে ৩ উইকেট হারিয়ে স্কোর বোর্ডে ১০০ রান তুলে ফেলে দলটি। উইকেটে ছিলেন দুই থিতু ব্যাটার চারিথ আসালাঙ্কা ও ধনঞ্জয়া ডি সিলভা। সেখান থেকে অনায়াসে দেড় শ পার হওয়ার কথা। পরের ওভারটি করতে এসেই দৃশ্যপট বদলে দেন রিশাদ। প্রথম বলে আসালঙ্কা, দ্বিতীয় বলে ফেরান লঙ্কান অধিনায়ক ওয়ানিন্দু হাসারাঙ্গাকে।পরের উইকেটটি স্মৃতির ক্যানভাসে ফ্রেমবন্দি করার মতো। জাত লেগ স্পিনারের মতোই বল ফেলেন লেগ স্টাম্পের বাইরে, তা কয়েক ডিগ্রি বাঁক খেয়ে হাসারাঙ্গার ব্যাটে আলতো ছোঁয়া দিয়ে জমা পড়ে স্লিপে দাঁড়ানো সৌম্য সরকারের হাতে। হ্যাটট্রিক না পেলেও পরের ওভারে ফেরান আরেক থিতু ব্যাটার ধনঞ্জয়াকে। প্রথম ২ ওভারে ১৬ রান দিয়ে উইকেটশূন্য থাকা এই লেগি পরের ২ ওভারে মাত্র ৬ রান দিয়ে নেন ৩ উইকেট। লঙ্কানদের বড় সংগ্রহের স্বপ্ন কার্যত সেখানেই শেষ!
বিশ্বকাপ অভিষেকে স্বপ্নের এই স্পেল নিয়ে রিশাদ বলেন, ‘আমি সেরাটা দেওয়ার চেষ্টা করেছি এবং নিজের শক্তির জায়গায় অটল থাকতে চেয়েছি। আমি ভয় নিয়ে বোলিং করি না। চেষ্টা করেছি, যখনই বোলিংয়ে আসব দলকে উইকেট এনে দিতে।’ নিজের চেষ্টায় সফল রিশাদ। তাতে লেগ স্পিনার নিয়ে এত দিন যে হাহাকার, সে আশার সলতেয় আলো জ্বালাতে পারলেন কি তিনি? অধিনায়ক নাজমুলের তেমনই মনে হচ্ছে, ‘আমরা সব সময় সংগ্রাম করি, আমাদের একটা লেগ স্পিনার নেই। সে জায়গাটা পূরণ হয়েছে। আমি আশা করব যে সামনের ম্যাচগুলোতেও সে এভাবে অবদান রাখবে।’
রিশাদের বোলিং নৈপুণ্যে শ্রীলঙ্কাকে ১২৪ রানে গুটিয়ে দেয় বাংলাদেশ। জয়ে বিশ্বকাপ শুরু করায় স্বস্তি ফিরেছে এত দিন গরম হাওয়া বয়ে যাওয়া বাংলাদেশ দলের ড্রেসিংরুমে। এই আত্মবিশ্বাস দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে পরের ম্যাচের টোটকা হিসেবে দেখছেন নাজমুল, ‘এ ধরনের ম্যাচ জিতলে তো সবাই আত্মবিশ্বাসী থাকে। এই আত্মবিশ্বাস নিয়ে যদি আমরা দ্বিতীয় ম্যাচে যেতে পারি, অবশ্যই এটা কাজে দেবে।’ এই আত্মবিশ্বাসের মালাই যেন গেঁথে দিলেন রিশাদ।