কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের বৈষম্যমূলক আচরণের এক জ্বলন্ত নজির স্থাপন করে চলেছেন বিসিক চেয়ারম্যান সঞ্জয় কুমার ভৌমিক। বিসিক একটি সরকারী প্রতিষ্ঠান, প্রতিষ্ঠানটির ৬৭-তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী ৩০ মে ২০২৪ তারিখ। বিসিক চেয়ারম্যান পদে আসীন হওয়ার পর থেকেই সঞ্জয় কুমার ভৌমিক কর্মচারীদের সাথে বৈষম্যমূলক আচরণ করে আসছেন। দেশের প্রচলিত শ্রম আইন এবং শ্রম অধিকার মানতে তিনি কোন মতেই রাজী নন। যা তার কাজে সুস্পষ্টভাবে প্রমাণ বহন করে চলেছে।
গত ২৮ মে ২০২৪ তারিখে বিসিক স্মারক নং-৩৬.০২.০০০০.০০৩.২৩.০০৬.১০/৯৮৬৩ এর মাধ্যমে সভার নোটিশ জারী করা হয়। যেখানে উল্লেখ করা হয়েছে বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প কর্পোরেশন (বিসিক) এর ৬৭তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী উদযাপন উপলক্ষ্যে আগামী ৩০ মে ২০২৪ তারিখ রোজ বৃহস্পতিবার সকাল ১১.০০ ঘটিকায় চেয়ারম্যান বিসিক মহোদয়ের সভাপতিত্বে বিসিক সম্মেলন কক্ষে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হবে। উক্ত আলোচনা সভায় বিসিক প্রধান কার্যালয়, বিসিক ট্রেনিং ইনষ্টিটিউট (বিটিআই), ঢাকা, নকশাঁ কেন্দ্র, বিসিক, ঢাকা, বিসিক আঞ্চলিক কার্যালয়, ঢাকা এবং বিসিক জেলা কার্যালয়, ঢাকার ৬ষ্ঠ গ্রেড ও তদুর্ধ পর্যায়ের সকল কর্মকর্তা সশীরে এবং আঞ্চলিক পরিচালক, বিসিক, চট্রগ্রাম, রাজশাহী, খুলনাসহ সকল জেলা প্রধান ও শিল্পনগরী কর্মকর্তাকে অনলাইনে জুম অ্যাপের মাধ্যমে অংশগ্রহণ করার জন্য নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা হলো।
বিবেকবান প্রতিটি মানুষ বুঝতে সক্ষম হবেন যে, বিসিক চেয়ারম্যানের কর্মকর্তা-কর্মচারী বিভাজন নীতি, বৈষম্যমূলক আচরণের সুস্পষ্ট একটি চিত্রফুটে উঠেছে এ ধরনের একটি সভার নোটিশ জারীর মাধ্যমে। বিসিকের প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী উদযাপন অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ বিসিকের সকল কর্মকর্তা ও কর্মচারীর অধিকারের মধ্যে পড়ে। একটি বৈষম্যমূলক নোটিশ জারি করে বিসিক চেয়ারম্যান তাদের অধিকার ক্ষুন্ন করেছেন। যার কারণে বিসিকের প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী অনুষ্ঠান সংগত কারণে বিভক্তিতে রূপ নিয়েছে।বিসিক কর্তৃপক্ষ পাশাপাশি বিসিক কর্মকর্তা সমিতি এবং বিসিক শ্রমিক কর্মচারী ইউনিয়ন সম্পূর্ণ আলাদাভাবে পুষ্পার্ঘ্য প্রদান করেছে। যার প্রমাণ পাওয়া যাবে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেইসবুকে। বিসিক চেয়ারম্যান স্বেচ্ছাছারিতার মাধ্যমে বৈষম্যমূলক আচরণ করেছেন, বঞ্চিত করেছেন কর্মচারীদের তাদের প্রাপ্য অধিকার হতে-যা কোন অবস্থাতেই শোভনীয় নয়।
বিসিক চেয়ারম্যানের কর্মচারীদের সাথে বৈষম্যমূলক আচরণের আরেকটি চিত্র ফুটে উঠেছে ৩রা এপ্রিল ২০২৪ তারিখে ৯২৭৭ নং স্মারকের মাধ্যমে তেজগাওস্থ বিসিক ভবনে ক্যান্টিন চালুকরণ এবং পরিচালনার জন্য কমিটি গঠনের মাধ্যমে। যেখানে উপদেষ্টা কমিটির ৭ জনের মধ্যে তিনি ১ জন এবং ৭ জনের মধ্যে কর্মকর্তা রাখা হয়েছে ৬ জনকে। দয়া করে কর্মচারী ইউনিয়নের সভাপতিতে উক্ত কমিটির ৭ নম্বর সদস্য হিসাবে রাখা হয়েছে। ১০ সদস্য বিশিষ্ট ক্যান্টিন পরিচালনা কমিটি গঠন করা হয়েছে মোঃ আব্দুল মতিন, পরিচালক (প্রকৌশল ও প্রকল্প বাস্তবায়ন) নামক সরকারের উপ-সচিব পদমর্যাদার একজন কর্মকর্তাকে আহবায়ক করে। আর সদস্য সচিবের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে তার বিশেষ পছন্দের লোক মোঃ সরোয়ার হোসেনকে। যেখানে একজন কর্মচারীর অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যায়নি। কর্মচারীবিদ্বেষী মনোভাব প্রদর্শন এবং কর্মচারীদের সাথে বৈষম্যমূলক আচরণের আর কোন প্রমানের প্রয়োজন আছে বলে মনে হলে তা হবে অতিমাত্রার অত্যুক্তি।
ক্যান্টিন পরিচালনা বিষয়ে বাংলাদেশের নজির বিহীন এ ধরনের কমিটি দ্বিতীয়টি খুঁজে পাওয়া যায়নি। বাংলাদেশ সচিবালয়সহ দেশের বিভিন্ন দপ্তরে স্থাপিত ও পরিচালিত ক্যান্টিন পরিচালনার বিষয়টি সম্পূর্ণরূপে ভিন্ন আংগিকে পরিচালনা হয়ে আসছে। যার পরিচালনার সাথে এত ব্যাপক কর্মকর্তার সংশ্লিষ্টতা খুঁজে পাওয়া যায়নি। অন্যদিকে মতিন-সরোয়ারের তত্তাবধানে পরিচালিত ক্যান্টিনটি পরিচালনায় বিসিক চেয়ারম্যান এবং কতিপয় কর্মকর্তার খাবারের আয়োজন এর জন্য বিপুল পরিমাণ সরকারী অর্থ ব্যয় করা হয়েছে। যেটি ভিআইপি ক্যান্টিন নামে কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের মাঝে সুখ্যাতি অর্জন করেছে। ক্যান্টিন স্থাপন, পরিচালনায় সরকারী নিয়মনীতি একেবারেই অনুসরণ করা হয়নি। ক্যন্টিনটি স্থাপন করা হয়েছে অনিরাপদ ভাবে এবং অনিরাপদ স্থানে। ক্যান্টিনটি বিসিকের সকল কর্মকর্তা ও কর্মচারীর সুবিধালাভের উদ্দ্যেশ্যে করা হয়নি। খাবারের চড়া মূল্য বলে দেয় এটি কার স্বার্থে বা উদ্দ্যেশ্যে পরিচালনা করা হচ্ছে। সংবাদ প্রকাশের পূর্বদিন পর্যন্ত মিল রেট ১২০-১৫০ এরমধ্যে, যা সাধারণ কর্মচারীদের নাগালের বাইরে। খাবারের মূল্য অবশ্যই সাধারণ কর্মচারীদের নাগালের মধ্যে অর্থাৎ ৫০-৬০ টাকার মধ্যে হওয়া বাঞ্চনীয়। ঢাকা শহরের বেশ কয়েকটি ক্যান্টিন এ খোঁজ খবর নিয়ে জানা গেছে যে, এ সকল ক্যান্টিনে কর্মচারীরা ৫০-৬০ টাকার মধ্যে খাবার খাওয়ার চমৎকার ব্যবস্থা বিদ্যমান আছে। যা মতিন-সরোয়ার পরিচালিত বিসিক ক্যান্টিনে নেই।
পিআরএল এ যাওয়ার আগে বেপরোয়া বিসিক চেয়ারম্যানের এ ধরণের কর্মকান্ড শ্রেনী বিভাজন তৈরী করার মনোবৃত্তি চরম বৈষম্যমূলক আচরণ। বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে আমলে নিয়ে শিল্প মন্ত্রণালয় এবং সরকারের প্রতিকারের ব্যবস্থা নেয়া প্রয়োজন।
এ বিষয়ে জানতে বিসিক চেয়ারম্যান সঞ্জয় কুমার ভৌমিককে কয়েকবার ফোন করলেও তিনি ফোন রিসিভ করেন নি। মুঠো ফোনে ম্যাসেজ দিলেও তিনি কোন রিপ্লাই দেন নি।