একাধিক জাতীয় দৈনিক পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশিত হলেও নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয় কোন বিভাগীয় পদক্ষেপ গ্রহন না করায় আরো বেপরোয়া দুর্নীতিতে মেতে উঠেছেন নৌ-পরিবহন অধিদপ্তরের ইঞ্জিনিয়ার এন্ড শিপ সার্ভেয়ার এন্ড এক্সামিনার মো: আবুল বাশার। তিনি এখন চীফ ইঞ্জিনিয়ার হওয়ার স্বপ্নও দেখছেন। ধরাতে সরা জ্ঞান করা এই শিপ সার্ভেয়ার এর অতিরিক্ত অর্থ লোভের কারণে নৌ পরিবহন অধিদপ্তরের যেমন সুনাম ক্ষুন্ন হচ্ছে ,তেমন জনগণও সরকারী প্রাপ্ত সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। এমন একজন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মন্ত্রণালয় কেন নিরবতা পালন করছে সেটাই এখন সকলের প্রশ্ন।
প্রশ্ন উঠেছে, একজন ১ম শ্রেণীর সরকারী কর্মকর্তা প্রতিদিন কি বার অথবা ফাইভ স্টার, থ্রি স্টার হোটেলে গমন করে মদ পান করতে পারেন? অবৈধ স্পা সেন্টারে গিয়ে শরীর ম্যাসাজ বা দেহপসারিনীদের সেবা নিতে পারেন? অবশ্যই পারেন না। কোন সরকারী কর্মকর্তা যদি এ ধরনের নোংরা কাজে লিপ্ত হন তবে তিনি অবশ্যই সরকারী চাকুরী শৃংক্ষলা বিধি ভঙ্গের অভিযোগে অভিযুক্ত হবেন এবং তিনি বিভাগীয় সব্বোর্চ দন্ডে চাকুরীচ্যুতও হতে পারেন। এটাই গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের বিধি বা আইন। কিন্তু সেই আইনকে বৃদ্ধাংগুলি প্রদর্শন করে যাচ্ছেন নৌ-পরিবহন অধিদপ্তরের একজন ১ম শ্রেণীর কর্মকর্তা। গত ৫ বছর ধরে তিনি এ ধরণের উশৃংক্ষল কাজে লিপ্ত থাকলেও তার বিরুদ্ধে কোন শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়নি নৌ-পরিবহন অধিদপ্তর বা নৌ- মন্ত্রণালয়। ফলে তিনি এ ধরনের কর্মকান্ডের সকল মাত্রা অতিক্রম করে এখন শীর্ষে পৌছে গেছেন। তার এ ধরনের নোংরা অপকর্মে নৌ-পরিবহন অধিদপ্তরের ভাবমূর্তিও ক্ষুন্ন হচ্ছে। অন্যান্য কর্মকর্তারাও বিব্রতকর প্রশ্নের সম্মুখীন হচ্ছেন।
এই সরকারী কর্মকর্তার নাম মো: আবুল বাশার । তিনি নৌ-পরিবহন অধিদপ্তরের ইঞ্জিনিয়ার এন্ড শিপ সার্ভেয়ার এন্ড এক্সামিনার পদে কর্মরত আছেন। তার বিরুদ্ধে অনিয়ম-দুর্নীতিসহ নিয়মিত মাদক সেবনের অভিযোগ পাওয়া গেছে। জানাগেছে, ২০১৯ সালে আওয়ামী লীগের একজন শীর্ষ নেতার সুপারিশে নৌ-পরিবহন অধিদপ্তরে ইঞ্জিনিয়ার এন্ড শিপ সার্ভেয়ার এন্ড এক্সামিনার পদে চাকুরী পান তিনি। তার গ্রামের বাড়ী ময়মনসিংহ জেলায়। তার বাবা একজন মুদি দোকানদার ছিলেন।
অভিযোগ অনুসন্ধানে জানা যায়, বাংলাদেশ মেরিন একাডেমির (তার ৩৮ ব্যাচে) তিনি কুলাঙ্গার হিসেবে খ্যাত ছিলেন। তার সময়ে উশৃঙ্খলতার দায়ে বাংলাদেশ মেরিন একাডেমির ইতিহাসে একমাত্র পুরোব্যাচ বহিষ্কৃত হয় । যার নেতৃত্ব দিয়েছিলেন এই মো: আবুল বাশার। পুরো ব্যাচের এই বহিষ্কারের ঘটনায় সেই ব্যাচের অধিকাংশ নিরীহ ক্যাডেট অবর্ণনীয় কষ্টের সম্মুখীন হন। যার রেশ এখনো অনেকে বয়ে নিয়ে বেড়াচ্ছেন অনেক ক্যাডেট।
সুত্রগুলো আরো জানায়, স্কুল জীবন থেকেই উশৃঙ্খল ও মাদকাসক্ত মো: আবুল বাশার এখনো মাসে কমপক্ষে ২০ দিন হোটেল সোনারগাঁও/ ইন্টার কন্টিনেন্টাল/ পূর্বাণী/ ঈশা খাঁ/ওয়েস্টিন হোটেলের বার ও ডিস্কোর নিয়মিত কাস্টমার। এছাড়াও ঢাকা শহরের সকল স্পা, মেসেজ পার্লার ও রেড লাইট এরিয়াতে তার নিয়মিত বিচরণ রয়েছে। তার এই রাবিশ জীবনযাত্রা উপভোগের আর্থিক যোগানদাতারা হচ্ছেন মার্চেন্ট ও ইনল্যান্ড পরীক্ষার চিহ্নিত দালাল আবু সাইদ, রাশেদি, সাগর আরো অনেকে। মার্চেন্টের এ ক্লাস থেকে ওয়ান, টু , থ্রি ক্লাসের মৌখিক পরীক্ষায় তার রেট হচ্ছে যথাক্রমে: ৩ লাখ, ৫ লাখ ও ৭ লাখ টাকা। ইনল্যান্ড তৃতীয়, দ্বিতীয় ও প্রথম শ্রেণীতে রেট যথাক্রমে ৫০ হাজার, ৭০ হাজার ও ১ লাখ টাকা।
তাছাড়াও ক্যাপ্টেন গিয়াস উদ্দিনের সাথে মিলে পানামা সিডিসি ও স্পেশাল ব্যাচের নাম দিয়ে এ পর্যন্ত প্রায় ৩০০ জনকে অবৈধভাবে সিডিসি প্রদান করে প্রায় ১৮ কোটি টাকা উপার্জন করেছেন। আর সে টাকায় মাস্তি করে বেড়িয়েছেন। একটি সেকেন্ডহ্যান্ড টয়োটা গাড়ীও কিনেছেন।
পানামা ও স্পেশাল সিডিসি সংক্রান্ত মামলাটি এখন হাইকোর্টের আপিল বিভাগে বিচারাধীন। যেখানে হাইকোর্ট বিষয়টি আমলে নিয়ে ৩ মাসের মধ্যে দুর্নীতি দমন কমিশনকে তদন্ত করে প্রতিবেদন প্রকাশের নির্দেশ প্রদান করেছেন। ২০১০ সালে বাংলাদেশ পতাকাবাহী প্রথম জাহাজ জাহান মনি (যেটি সোমালি জলদস্যু দ্বারা অপহৃত হয়েছিলো) সে জাহাজে দ্বিতীয় প্রকৌশলী হিসেবে কর্মরত থাকাকালীন সমুদ্রের পানি দ্বারা ইঞ্জিন কুলিং করে ইচ্ছেকৃত ইঞ্জিন নষ্ট করেন আবুল বাশার। যে কারণে জাহাজ মালিক শাহজাহান তার শিপিং কোম্পানীতে (এস আর শিপিং এ) চিরদিনের জন্য নিষিদ্ধ করেন আবুল বাশারকে। তবে এই রকম ঘটনা এটি তার জীবনে প্রথম নয় বরং সে ক্যাডেট লাইফ থেকেই কোনো কোম্পানিতেই এক বারের পর দ্বিতীয়বার চাকরি করতে পারেননি তার প্রফেশনাল ডেস্ট্রাকশন এর জন্য।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে নৌ পরিবহন অধিদপ্তরের ইঞ্জিনিয়ার এন্ড শিপ সার্ভেয়ার এন্ড এক্সামিনার মো: আবুল বাশার সব অভিযোগ অস্বীকার করেন। বলেন, এ সব অপপ্রচার ছাড়া আর কিছুই নয়। তবে তার এই বক্তব্য মানতে রাজী নন ভুক্তভোগি মহল।
এ ক্ষেত্রে তারা নৌ-মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী,সচিব, নৌ-পরিবহন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এবং জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী ও সিনিয়র সচিবের পদক্ষেপ কামনা করেছেন।