ঢাকা সকাল ১১:১২ সোমবার, ১৩ই অক্টোবর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
আজকের সর্বশেষ সবখবর

দুর্নীতির দায়ে অভিযুক্ত প্রতিষ্ঠানকে আবারও ৮০ কোটির টাকার কার্য্যাদেশ প্রদানের প্রস্তুতি প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের

বিশেষ প্রতিবেদক
জুন ৪, ২০২৪ ৩:০৬ পূর্বাহ্ণ
Link Copied!

সরকারী দপ্তরে মালামাল সরবরাহে কালো তালিকাভুক্তির সুপারিশপ্রাপ্ত, সমাজসেবা দপ্তরে জামানত বাজেয়াপ্তকৃত, প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের অধীনে জনস্বাস্থ্য সুরক্ষা সেবা প্রকল্পের চায়না যন্ত্রপাতির গায়ে ইউরোপীয় স্টিকার দিয়ে বিলের টাকা উত্তোলনকারী এবং তদন্তে প্রমাণিত ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান ‘বাংলাদেশ সায়েন্স হাউস’ নামীয় প্রতিষ্ঠানকে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরে কালো তালিকাভুক্তি না করে একই প্রতিষ্ঠানকে পুনরায় ৮০ কোটি টাকার কার্য্যাদেশ দেয়ার সুপারিশ করেছে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের পরিচালক বাজেটের নেতৃত্বে গঠিত মূল্যায়ন কমিটি। দরপত্র মূল্যায়ন কমিটির সুপারিশ অনুযায়ী কার্য্যাদেশ দেয়ার অনুমোদন ও চুক্তি স্বাক্ষরের সম্মতি প্রদানের জন্য মহাপরিচালক প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের কর্তৃক বিগত ২৮/৫/২০২৪ ইং তারিখে ২০৯ সংখ্যক পত্রে মন্ত্রণালয়ের সচিব বরাবরে পত্র দিয়েছে।
উল্লেখ্য যে, প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের এলডিডিপি প্রকল্পে মূল ডিপিপিতে মোট ১ লাখ ইউনিট Hygienic Cleaning Tools ক্রয়ের সংস্থান আছে। ডিপিপি অনুযায়ী প্রকল্পের প্রত্যেক বছরে ২৫ হাজার ইউনিট করে ক্রয় করে নির্দিষ্ট সুফলভোগীদের নিকট সরবরাহ করার কথা। কিন্তু প্রকল্পের মেয়াদ ডিসেম্বর/২৩ শেষ হলেও ১ ইউনিট Hygienic Cleaning Tools অদ্য পর্যন্ত ক্রয় করে সরবরাহ করা হয়নি। বর্তমানে প্রকল্পের বর্দ্ধিত মেয়াদ চলছে যা আগামী অক্টোবর/২৫ শেষ হবে। অর্থাৎ আর মাত্র ১৬ মাস বাকি রয়েছে। এই অল্প সময়ে সুফল ভোগী চিহ্নিত করে মালামাল ক্রয় করে সরবরাহ করলে তা কোন কাজে আসবে না বলে বিশিষ্টজনের অভিমত। তাদের দাবী বাংলাদেশ সায়েন্স হাউজের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগগুলো যথাযথ তদন্ত না করে পুনরায় কোন কার্য্যাদেশ যাতে প্রদান না করা হয়। উল্লেখ্য যে, বাংলাদেশ সায়েন্স হাউস আলোচ্য প্রকল্পের অধিনে প্রায় ১৫ কোটি টাকার মিল্ক ক্রিম সেপারেটর মেশিন সরবরাহ করেছিল। উক্ত মালামালগুলিও চায়নার নি¤œমানের হওয়ায় কোন কাজে আসেনি বা সুফলভোগীরা ব্যবহার করতে পারেনি। মেশিন চালিত মিল্ক ক্রিম সেপারেটর মেশিনগুলি বর্তমানে শতভাগ নষ্ট। যদিও ঠিকাদার কর্তৃক মেশিনগুলি ঠিক করে দেয়ার কথা।এই বাংলদেশ সায়েন্স হাউস আলোচ্য প্রকল্পে প্যাকেজ নং- জি-৩৯ এর বিপরীতে ২০ কোটি টাকার মেশিনারীজ সরবরাহ করেছে। উক্ত মেশিন গুলিও স্টিকার লাগানো। ফলে চালু করা সম্ভব হয়নি বলে মাঠ পর্য্যায়ের একাধিক কর্মকর্তা জানান। একই ভাবে প্যাকে জনং জিডি-৪০-৪১ এর মোট ৩,৩৪,৭৮,৩৫৪/ টাকার মোট ২৪০টি আইটেমের মেশিনারীজ ও অন্যান্য মালামাল সরবরাহের বিল উত্তোলন করলেও বাস্তবে অধিকাংশ উপজেলায় এ ধরনের কোন মালামাল সরবরাহ দেয়া হয়নি।এছাড়া বাংলাদেশ সায়েন্স হাউস প্যাকেজ নং জিডি-৪৪ এ ৭৯,৮২,৫০০ / টাকার ল্যাবরেটরীর জন্য হার্ডওয়ার এন্ড সফটওয়ার ক্রয়ের বিল উত্তোলন করলেও এ পর্যন্ত উক্ত কাজ সম্পাদন করেনি। একই প্রকল্পে প্যাকেজ নং-জিডি-৪৬ এ ৩১,২৯,৬০১ টাকার কনজুমার গুডস, প্যাকেজ নং- জিডি-৫২ এ ১,৮৯,৩৭,৮২৬/ টাকার সিরিঞ্জ ও নিডিল, কুলবক্স, প্যাকেজ নং- জিডি-৬৯ এ ৪,১৫,০৩,৭৯০/ টাকার কনজুমাবলস আইটেমস, প্যাকেজ নং- জিডি-৪৫ এ ২,০৭,৩০,০০০/ টাকার ফুডস সেফটি ল্যাবের জন্য ইনস্টুমেন্ট সরবরাহ, জিডি-৬৩ এ ২,৮৬,৩৪,৯৯৫/ টাকার ৪৬৫টি উপজেলার মিনি ডায়াগনেষ্টিক ল্যাবের জন্য কনজুমার আইটেমস, জিডি-৮৯ এ ২,৩৯,৫৭,৪৯৬/ টাকার কিট বক্স সরবরাহ, জিডি-১০ এ ৯,৯৩,০০৮/ টাকার এনটিসেফটিক আইটেম সরবরাহ, জিডি-৬৩ এ ২,৮৬,৩৪,৯৯৫/ টাকার কনজুমারস আইটেম সরবরাহ বাবদ বিল উত্তোলন করে অফিসের কতিপয় অসাধু কর্মকর্তা ও কর্মচারীর যোগসাজসে অল্প কিছু মালামাল দিয়ে সমূদয় টাকা আত্মসাৎ করেছে বলেও অভিযোগ রয়েছে। যে সকল দপ্তরে মালামাল সরবরাহ দেখানো হয়েছে সে সকল অধিকাংশ দপ্তরের সশ্লিষ্ট কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের সংগে যোগাযোগ করে জানা যায়, তারা বাংলাদেশ সায়েন্স হাউজ নামক প্রতিষ্ঠান হতে কোন মালামালই সরবরাহ পায়নি। অধিদপ্তরের মহাখালী অফিসেও ভুয়া বিল করে অর্থ আত্মসাতের কারণে বর্তমানে দুদকে একাধিক মামলা চলমান রয়েছে বলে নাম প্রকাশে অনচ্ছিুক একাধিক ঠিকাদার জানিয়েছে। তাদের অভিযোগ বাংলাদেশ সায়েন্স হাউসের মালিক আব্দুল আওয়াল নি¤œদর দিয়ে কার্য্যাদেশ নেয়। পরে অফিসের সাথে যোগাযোগ করে নি¤œমানের মালামাল সরবরাহ করে এবং অধিকাংশ ক্ষেত্রে মালামাল সরবরাহ না করেই অফিস এবং নিজেদের মধ্যে টাকা ভাগাভাগি করে নেয়। প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের অধিনে বাংলাদেশ সায়েন্স হাউস কর্তৃক যে সকল মালামাল সরবরাহের বিল পরিশোধ করা হয়েছে তার সবগুলোই তদন্ত করা হলে অভিযোগগুলো শতভাগ প্রমাণিত হবে বলে সচেতনমহল মনে করেন।

বিনা অনুমতিতে এই সাইটের সংবাদ, আলোকচিত্র অডিও ও ভিডিও ব্যবহার করা বেআইনি।