দেশের উপকূলীয় জেলাগুলো প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে প্রায়ই ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। ভয়াবহ প্রাকৃতিক দুর্যোগে সম্পদের বিপুল পরিমাণে ক্ষতির পাশাপাশি মানুষের জীবনও কেড়ে নিচ্ছে।জলোচ্ছ্বাস থেকে রক্ষা পেতে উপকূলীয় এলাকায় সরকার বেড়িবাঁধও নির্মাণ করছে। এরপরও দুর্যোগের হাত থেকে রেহাই পাওয়া যাচ্ছে না। টেকসই বেড়িবাধঁ নির্মাণ করা হলেও অনেক ক্ষেত্রে প্রবল স্রোত এবং জলোচ্ছ্বাসের কারণে তা ভেঙ্গে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হচ্ছে।সাম্প্রতিককালে উপকূলীয় এলাকায় রেমালের তাণ্ডবে পানি উন্নয়ন বোর্ডর বেড়িবাধঁ ভেঙ্গে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।দক্ষিণাঞ্চলের অনেক জেলায় পানি উন্নয়ন বোর্ডর বেড়িবাঁধ ক্ষতিগ্রস্থ হলেও সাতক্ষীরা জেলায় এর ব্যতিক্রম ঘটেছে।৬০ দশকে উচ্চ জোয়ারের প্লাবন এবং লবণাক্ততা থেকে উপকূলীয় জনগণকে রক্ষার লক্ষ্যে সাতক্ষীরা জেলায় শ্যামনগর, আশাশুনি,কালিগঞ্জ, দেবহাটা উপজেলায় বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের উদ্যোগে ৬৭৩ কিঃমিঃ বেড়ীবাঁধ নির্মাণ করা হয়।নির্মাণের পর থেকে উক্ত বেড়ীবাঁধ সমূহবিভিন্ন সময় প্রাকৃতিক দুর্যোগের (বিশেষত ঘূর্ণিঝড় এবং জলোচ্ছ্বাসের) হাত থেকে উপকূলীয় সাতক্ষীরা জেলায় বসবাসরত জনসাধারণকে রক্ষা করে আসছে। ভৌগোলিক কারণে উপকূলীয় এই অঞ্চলে প্রায় প্রতিবছরই এক বা একাধিক ঘূর্ণিঝড় আঘাত হানে।নিকট অতীতে সিডর (২০০৭), নার্গিস (২০০৮), আইলা (২০০৯), বুলবুল (২০১৯), আম্ফান (২০২০) এবং ইয়াস (২০২১) এর মতো প্রলয়কারী ঘূর্ণিঝড়ে বেড়িবাঁধ সমূহ মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। সেই সাথে সাধারণ জনগণের জানমালেরও ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়। গত ২৬ মে রাতে ঘূর্ণিঝড় ‘রেমাল’ সরাসরি সাতক্ষীরা উপকূল দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করে। স্থলভাগে আঘাতের সময় বাতাসের গতিবেগ ছিল ঘন্টায় ১১০-১২০ কিলোমিটার। ‘রেমাল’ উপকূল স্পর্শ করা থেকে শুরু করে নিম্নচাপে পরিণত হওয়ার পরও প্রায় ৫০ ঘন্টা বাংলাদেশে অবস্থান করে। ইতোপূর্বে সংঘটিত অন্য কোন ঘূর্ণিঝড় এত দীর্ঘ সময় লোকালয়ে অবস্থান করেনি। ৩টি পূর্ণ জোয়ারের সময়ে ঘূর্ণিঝড় অবস্থান করায় আশংকা করা হয়েছিল অতীতের মতো এবারও ঘূর্ণিঝড়ের আঘাতে অনেক জায়গায় বেড়িবাঁধ ভেঙে সাতক্ষীরা জেলার বিস্তীর্ণ অঞ্চল প্লাবিত হবে।এতে স্থানীয় জনসাধারণ ব্যাপক দুর্ভোগের সম্মুখীন হবে।সাতক্ষীরা পানি উন্নয়ন বোর্ড-১ এর নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ সালাউদ্দিনের সঙ্গে আলাপকালে জানা গেছে, ঘূর্ণিঝড় সংঘটিত হওয়ার পূর্ব থেকে ঘূর্ণিঝড় লোকালয় অতিক্রম করা পর্যন্ত পাউবোর মাঠ পর্যায়ের সকল কর্মকর্তা/কর্মচারীগণ সার্বক্ষণিক দুর্যোগপ্রবণ এলাকাসমূহে অবস্থানপূর্বক স্থানীয় জনগণের সহায়তায় ঝুঁকিপূর্ণ স্থানসমূহ মেরামতের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করে। যার ফলে সাতক্ষীরা জেলায় কোথাও বেড়িবাঁধ ভেঙ্গে লোকালয়ে লোনা পানি প্রবেশ করেনি। পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী ও সচিবের নির্দেশনায় সার্বক্ষণিক মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তা/কর্মচারীরা ঝুঁকিপূর্ণ বেড়িবাঁধ রক্ষায় উপকূলীয় এলাকায় অবস্থান করে স্থানীয় জনসাধারণের সহায়তায় ঘুর্ণিঝড় মোকাবেলায় নিরলস পরিশ্রম করে গেছেন মর্মে নির্বাহী প্রকৌশলী জানান। যার ফলশ্রুতিতে অতি ঝুঁকিপূর্ণ গাবুরা, শাকবাড়িয়া, বিছট এর বিস্তীর্ণ উপকূল ঘূর্ণিঝড় রেমাল এর আঘাত থেকে রক্ষা করা সম্ভব হয়েছে।দক্ষিণাঞ্চল পশ্চিমাঞ্চলের (খুলনা) পাউবোর অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী বিদ্যুৎ কুমার সাহা এই প্রতিবেদককে জানান, ‘ঘূর্ণিঝড়ের আঘাতে সাতক্ষীরা জেলায় ১৪৪টি স্থানে ৩৬.৭৫০ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। উক্ত ক্ষতিগ্রস্ত বেড়িবাঁধ সমূহ পূর্নবাসনে ৩৩৬৯.৪২ লক্ষ টাকা অর্থের প্রয়োজন হবে। তবে অতি ঝুঁকিপূর্ণ ৩০.১৮৯ কিঃমিঃ বাঁধ নির্মাণে ২৭১৯.১৪ লক্ষ টাকা দরকার হবে, যা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের অনুমতির নিমিত্তে পানি বোর্ডের সদর দপ্তরে প্রস্তাবাকারে প্রেরণ করা হয়েছে এবং অনুমতি সাপেক্ষে ঝুঁকিপূর্ণ বেড়িবাঁধসমূহ দ্রুত মেরামতের উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে’। সাতক্ষীরা পানি উন্নয়ন বোর্ডর প্রকৌশলী, কর্মকর্তা, কর্মচারি এবং ঠিকাদারগণের অক্লান্ত পরিশ্রমে এবারের ভয়াবহ প্রাকৃতিক দুর্যোগ ‘রেমাল’ মোকাবেলা করা সম্ভব হয়েছে বলে সাতক্ষীরাবাসী মনে করেন।