ঢাকা ভোর ৫:২৬ রবিবার, ১২ই অক্টোবর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
আজকের সর্বশেষ সবখবর

গ্র্যান্ডমাস্টার জিয়ার বিদায়ে শোকের ছায়া ক্রীড়াঙ্গনে

স্পোর্টস ডেস্ক
জুলাই ৬, ২০২৪ ৮:৫৭ অপরাহ্ণ
Link Copied!

গ্র্যান্ডমাস্টার জিয়াউর রহমান জীবনের দীর্ঘ সময় কাটিয়েছেন জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের পুরাতন ভবনে। এই ভবনের তৃতীয় তলায় বাংলাদেশ দাবা ফেডারেশন। সেখানে জিয়া জাতীয়-আন্তর্জাতিক বহু টুর্নামেন্ট খেলেছেন। সেই জাতীয় ক্রীড়া পরিষদে শেষ বারের মতো আনা হয়েছিল তাকে। পুরোনো জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের নিচতলায় অনুষ্ঠিত হয় জিয়ার জানাজা। ক্রীড়াঙ্গনের অনেকেই উপস্থিত ছিলেন জানাজায়। সেখানে আনুষ্ঠানিকতা শেষে জিয়ার মরদেহ নিয়ে যাওয়া হয় মোহাম্মদপুরে তাজমহল রোডে। বাবার কবরের পাশে হচ্ছে তার শেষ ঠিকানা।
জিয়া চলে যাওয়ায় বাংলাদেশের দাবার অপূরণীয় ক্ষতি হয়েছে বলে মনে করেন দাবা ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ শাহাবুদ্দিন শামীম। জানাজায় এসে তিনি বলেন, ‘অনেকেই টুর্নামেন্টের পুরস্কার ও নানা সুযোগ-সুবিধা কম হলে খেলতে চাইতেন না। জিয়া কখনোই এ রকম ছিলেন না।
সব টুর্নামেন্টেই তিনি অংশগ্রহণ করতেন। যেন অন্যরা তার মাধ্যমে শিখতে পারে।’ জিয়ার স্মৃতি ধরে রাখার পরিকল্পনার কথাও জানান ফেডারেশন সাধারণ সম্পাদক। তিনি বলেন, ‘জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ ভবনেই আলাদা একটি ফ্লোর পাওয়ার কথা ছিল আমাদের। সেখানে গ্র্যান্ডমাস্টার কর্নারের পরিকল্পনা ছিল। সেটা যত দিন না হয় আমরা বর্তমান দাবা ফেডারেশন ক্রীড়াকক্ষকেই জিয়ার নামকরণ করার উদ্যোগ নেব।’ জিয়াকে চিরবিদায় জানিয়ে বাংলাদেশ অলিম্পিক অ্যাসোসিয়েশনের মহাসচিব সৈয়দ শাহেদ রেজা বলেন, ‘জিয়ার অকালমৃত্যুতে আমরা সবাই শোকাহত। তার যে পবিত্র স্থান, যে স্থানকে সে ভালোবাসত, সেখান থেকেই সে চলে গেল।
দাবা খেলা অবস্থাতেই মারা গেল। ভালো একজন খেলোয়াড়কে হারিয়েছি আমরা।’ জিয়ার পরিবারকে আর্থিক সহায়তার কথা জানিয়ে বিওএ মহাসচিব বলেন, ‘আমরা তার পরিবারের পাশে থাকবো। দাবা ফেডারেশনের সঙ্গে কথা বলে একসঙ্গে কাজ করবো। প্রয়োজনে তারা যেখানে যেতে বলবে আমরা যাবো। একটা তহবিল গঠনের দরকার আছে।’ দাবা ফেডারেশনের সহসভাপতি তরফদার রুহুল আমিনও তহবিল গঠনের কথা বলেছেন। গতকাল রাতে যুব ও ক্রীড়ামন্ত্রী নাজমুল হাসানের সঙ্গে এ নিয়ে তাদের কথা হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘মাননীয় মন্ত্রী এ ব্যাপারে বিশেষ ব্যবস্থা নেবেন বলেছেন। দাবা ফেডারেশনের পক্ষ থেকে আমরাও ব্যবস্থা নেব। সবাই মিলে একটা তহবিল গঠন করে দিতে পারলে ভালো হবে। জিয়ার ছেলেকেও পরিচর্যা করে গ্র্যান্ডমাস্টার বানাতে পারি কি না, চেষ্টা করব। এ ব্যাপারে সবাই একযোগে কাজ করব।’ এ সময় উপস্থিত দুই গ্র্যান্ডমাস্টার আবদুল্লাহ আল রাকিব ও এনামুল হোসেন রাজীব জিয়াকে নিয়ে নানা স্মৃতিচারণা করেন।
রাকিবের সঙ্গে জিয়ার শেষ দেখা হয়েছিল ২০২১ সালে। নিজেই সেটা জানিয়ে বাংলাদেশের চতুর্থ গ্র্যান্ডমাস্টার বলেন, ‘আম্মা মারা যাওয়ার পর আমি দাবা থেকে দূরে আছি। গতকাল যখন শুনেছি জিয়া ভাইয়ের মৃত্যুর খবর, অনুভূতি ব্যক্ত করার মতো নয়। জিয়া ভাই তার জীবনের প্রতিটি সেকেন্ড দাবায় ব্যয় করেছেন। আমার দেখা তিনি বাংলাদেশের দাবায় সেরা পারফরমার ও সেরা খেলোয়াড়। মানুষ হিসেবেও অসাধারণ। জিয়া ভাইয়ের ক্যারিয়ার, তার চিন্তা চেতনায় একাগ্রতা দেখে আমরা শিখতাম।’ শুক্রবার রাজীবের সঙ্গে খেলতে খেলতেই জিয়া মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন গ্র্যান্ডমাস্টার জিয়াউর রহমান। রাজীবের মাথায় এখনও ঘুরেফিরে সেই স্মৃতি। এ নিয়ে তিনি বলেন ‘২৫ চাল পর্যন্ত হয়েছিল খেলার। জিয়া ভাইয়ের পজিশন ভালোই ছিল। একবারের জন্যও মনে হয়নি সে অসুস্থ বা একটু অন্যরকম। তার একটি চাল মনে হয়েছিল খুবই সাধারণ, কিছুক্ষণ পর বুঝলাম খুবই ভালো চাল ছিল।’ দেশের পাঁচ গ্র্যান্ডমাস্টারের মধ্যে জিয়াই সবচেয়ে বেশি নিয়মিত খেলতেন। এরপর রাজীব, তার চেয়েও কম নিয়াজ মোর্শেদ। রিফাত বিন সাত্তার ও রাকিব দাবা থেকেই বিচ্ছিন্ন। চলমান জাতীয় দাবা চ্যাম্পিয়নশিপে তিন গ্র্যান্ডমাস্টার খেলায় ফিদে মাস্টার মনন রেজা নীড়ের আন্তর্জাতিক নর্ম হয়েছে।

বিনা অনুমতিতে এই সাইটের সংবাদ, আলোকচিত্র অডিও ও ভিডিও ব্যবহার করা বেআইনি।