বিসিকের দুইজন কর্মকর্তার গুরুতর অসদাচরণ ধামাচাপা দিতে গিয়ে ফেঁসে যাচ্ছেন বিসিক চেয়ারম্যান সঞ্জয় কুমার ভৌমিক। ওই দুই কর্মচারীরা অপকর্ম নিয়ে গণমাধ্যমে একাধিক সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। প্রকাশিত সংবাদের বিষয়টির যথার্থতা প্রমাণ করে শিল্প মন্ত্রণালয়ের ২৫ এপ্রিল ২০২৪ তারিখে প্রেরিত পত্রের মাধ্যমে। অভিযুক্ত দুইজন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে কোন প্রকার ব্যবস্থা গ্রহণ না করেই তাদের উপস্থাপিত প্রস্তাবমতে কর্মী ব্যবস্থাপনা শাখার উপব্যবস্থাপককে আহবায়ক করে অফিস আদেশ স্মারক নং-৯৬৭৭ এর মাধ্যমে ৩ সদস্য বিশিষ্ট একটি কমিটি গঠন করা হয় ১৫ মে ২০২৪ তারিখে।
আউটসোর্সিং নীতিমালার ব্যত্যয় ঘটিয়ে অফিস সহায়ক এবং গাড়ী চালক আউটসোর্সিং প্রক্রিয়ায় নিয়োগ দান কৌশল হিসাবে উল্লেখ করা হয়েছে হেল্পিং সার্ভিস এবং ড্রাইভিং সার্ভিস। আউটসোর্সিং নীতিমালায় এ ধরনের কোন পদ দবীর অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যায়নি। এ ধরনের পদ নাম আবিস্কারক বিসিকের কর্মী ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা মোঃ আরিফ হোসেন এবং কর্মী ব্যবস্থাপনা শাখা প্রধান মোঃ নাজমুল হোসেন বলে নিভর্রযোগ্য সূত্রে জানা গেছে। এ ধরনের আচরণ সরকারী কাজে অবহেলা প্রদর্শন, উদাসীনতা প্রদর্শন, সরকারী নিয়ম নীতি, আইন, বিধি-বিধান প্রতিপালনে অস্বীকৃতি জ্ঞাপন, স্বেচ্ছাচারিতা প্রদর্শন এবং সরকারী দপ্তরে অসন্তোষ সৃষ্টির উদ্দ্যেশ্য প্রণোদিত কাজ।
একই পদে একদিকে আউটসোর্সিং অন্যদিকে দৈনিক ভিত্তিক নিয়োগ দান প্রক্রিয়ার সাথে যুক্ত ব্যক্তিদের সরকারী দায়িত্ব পালনে অবহেলা, স্বেচ্ছাচারিতা এবং আইন নামানার প্রবণতার বিষয়টির সুস্পষ্ট ইংগিত বহন করে। একদিকে আউটসোর্সিং নিয়োগ অন্যদিকে দৈনিক ভিত্তিক নিয়োগ দান কার্যক্রম সংগত কারণেই প্রশ্নবিদ্ধ একটি ব্যাপার।
প্রশাসনিক মন্ত্রণালয়ের জনবল নিয়োগের ছাড়পত্র চেয়ে বিভ্রান্তিকর, মিথ্যা, বানোয়াট, ভিত্তিহীন তথ্য প্রেরণ করা হয়েছে। এ ব্যাপারে দৈনিক পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে এবং দৈনিক পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশিত হওয়ার পর বিষয়টি অবগত হয়ে প্রশাসনিক মন্ত্রণালয় হতে সঠিক তথ্য চেয়ে পত্র প্রেরণ করা হয়েছে,মন্ত্রণালয়ের পত্রের প্রেক্ষিতে শুন্য পদের তালিকা যাচাই করে প্রতিবেদন দাখিলের জন্য তিন সদস্য বিশিষ্ট কমিটি গঠন করা হয়েছে, যার অফিস আদেশ স্মারক নং-৯৬৭৭, তারিখ ১৫ মে ২০২৪। পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশ, মন্ত্রণালয়ের পত্র এবং কমিটি গঠন প্রমাণ করে যে, কর্মী ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা মোঃ আরিফ হোসেন এবং কর্মী ব্যবস্থাপনা শাখা প্রধান মোঃ নাজমূল হোসেন সরকারী দায়িত্ব পালনে অবহেলা প্রদর্শন করে বিভ্রান্তিকর, মিথ্যা, বানোয়াট, ভিত্তিহীন তথ্য উপস্থাপন ও তা মন্ত্রণালয়ে প্রেরণ করেছেন। বিষয়টির সত্যতা নিশ্চিত হওয়ার পরও তাদেরকে স্বপদে বহাল রাখার পিছনে কোন না কোন উদ্দ্যেশ্য কাজ করছে। এ ক্ষেত্রে বিসিক পরিচালক (প্রশাসন) এবং বিসিক চেয়ারম্যান তাদের প্রতি সদয় হওয়ার কারণটি উদঘাটন করা প্রয়োজন।
আরো রহস্যজনক ব্যপার হচ্ছে প্রয়োজনীয় যোগতা, অভিজ্ঞতা সম্পন্ন সহকারী মহাব্যবস্থাপক ও সমমানের (৫ম গ্রেডভুক্ত) পদে ১৭ জন কর্মকর্তা কর্মরত থাকার পরও জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের ১৮ এপ্রিল ২০২৩ তারিখের নির্দেশনা লংঘন করে মোঃ নাজমুল হোসেন (যিনি ৬ষ্ঠ গ্রেডের কর্মকর্তা)-কে কর্মী ব্যবস্থাপনা শাখার শাখা প্রধান হিসাবে কমর্রত রাখার মূল উদ্দ্যেশ্য রহস্যজনক একটি ব্যাপারই বটে।
একই অবস্থা বিসিকের নিরীক্ষা বিভাগের বিভাগীয় প্রধানের কার্যক্রমে। অহেতুক বিভ্রান্তি সৃষ্টিকারী এবং কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের স্বার্থবিরোধী কাজে জড়িত সাবধান আলীর বিরুদ্ধে বিসিক চেয়ারম্যানের নিকট মৌখিক অভিযোগ করে ছিলেন বিসিকের সাবেক উপ-মহাব্যবস্থাপক রতন কুমার আইস সরকার। তখন বিসিক চেয়ারম্যান তাকে পরামর্শ প্রদান করেছেন যে, সাবধান আলীকে ম্যানেজ করে আপনার কাজটি করে নিয়ে যান। বিসিকের নিরীক্ষা বিভাগের প্রধানের পদটি উপ-মহাব্যবস্থাপক সমমানের কর্মকর্তার পদ। এ পদেও জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের ১৮ এপ্রিল ২০২৩. তারিখের নির্দেশনা লংঘন করে সাবধান আলীকে বিভাগীয় প্রধানের দায়িত্ব প্রদান করা হয়েছে।
একদিকে কমিটি গঠন অন্যদিকে ছাড়পত্রের প্রস্তাব প্রেরণ বাস্তব ভিত্তিক নয়। কমিটির রিপোর্ট পাওয়ার পূর্ব পর্যন্ত কোন অবস্থাতেই শুন্যপদে জনবল নিয়োগের ছাড়পত্র প্রস্তাব যৌক্তিক হতে পারে না। পদ সংখ্যায় বিভ্রান্তি থাকার কারণে মন্ত্রণালয়ের পত্রের প্রেক্ষিতে কমিটি গঠন করা হয়েছে, যা অস্বীকার করার সুযোগ বিসিক চেয়ারম্যান তথা বিসিক কর্তৃপক্ষের থাকার কথা নয়। তথাপিও আরো লেজেগোবরে অবস্থা তৈরী করে নিজের স্বাক্ষরে নিজের ইচ্ছা মতো করে ১৯৯ জন জনবল নিয়োগের একটি ছাড়পত্র প্রস্তাব প্রেরণ করেছেন ২৭ মে ২০২৪ তারিখে। পত্রিকা কর্তৃপক্ষের হাতে থাকা তথ্যমতে শিল্প মন্ত্রণালয়ে প্রেরিত বিসিকে ৩য়-১৬ গ্রেডে জনবল নিয়োগের ছাড়পত্র প্রস্তাবটি বিভ্রান্তিকর, অসংগতিপূর্ণ,অসামঞ্জস্যপূর্ণ এবং বিধি বহির্ভুত প্রস্তাব। প্রেরিত প্রস্তাবে অস্ংগতির বিষয়গুলো হচ্ছে- ১২ মার্চ ২০২৪ তারিখের প্রেরিত পত্রের মাধ্যমে ১৯২টি পদের ছাড়পত্র প্রস্তাব প্রেরণ করা হয়েছিল।২৭ মে ২০২৪ তারিখের প্রেরিত পত্রের মাধ্যমে ১৯৯ টি পদের ছাড়পত্র প্রস্তাব প্রেরণ করা হয়েছে। পদ ভিত্তিক জনবলের সংখ্যায় তারতম্য ঘটানো হয়েছে, যা সরকারী কাজে অবহেলা প্রদর্শন, উদাসীনতা প্রদর্শন, খামখেয়ালীপূর্ণ এবং প্রতারণামূলক আচরণ।
বিসিক প্রতিষ্ঠান প্রধান বিসিক চেয়ারম্যানকে স্মরণে রাখা প্রয়োজন নিয়োগ একটি অতিশয় গুরুত্বপূর্ণ কাজ। নিয়োগ কাজে বৈষম্যমূলক আচরণ করা যাবে না। তথাপিও তিনি কার্যসম্পাদনের প্রতিটি ক্ষেত্রে বৈষম্যমূলক আচরণ করেই চলেছেন। যে কাজটি তিনি করেছেন প্রশাসনিক মন্ত্রণালয় হতে ১২ জন গাড়ি চালক (ড্রাইভার) নিয়োগের অনুমোদন দেয়া হয়েছে অক্টোবর ২০২৩ এ। সেটিকে গোপন করে ক্ষমতার অপব্যবহার করে আউটসোর্সিং নীতিমালার ব্যত্যয় ঘটিয়ে ৬ জন গাড়ী চালককে আউটসোর্সিং প্রক্রিয়ায় নিয়োগ দেয়া হয়েছে মে মাসে । জনবল নিয়োগ সংক্রান্ত কাজে বিসিকের প্রশাসন বিভাগে নিয়োজিত কর্মকর্তাদের সরকারী কাজে অবহেলা, উদাসীনতা, অদক্ষতা ও অযোগ্যতার কারণে বারবার বিভ্রান্তিকর, বৈষম্যমূলক এবং খামখেয়ালীপূর্ণ তথ্যমন্ত্রণালয়ের প্রেরণ করা হচ্ছে। এ কাজে দক্ষতা, যোগ্যতা ও অভিজ্ঞতা এবং আন্তরিকতা সম্পন্ন জনবল পদায়ন করা একান্ত প্রয়োজন।
বিধি-বিধানের ব্যত্যয় ঘটিয়ে সরকারী কার্যসম্পাদনে বিসিক চেয়ারম্যান এর অবহেলা, উদাসীনতা প্রদর্শন এবং কর্মচারী পর্যায়ে বৈষম্যমূলক আচরণের প্রেক্ষিতে চরম অসন্তোষের কারণে শান্তিপূর্ণ পরিবেশ নষ্ট হওয়ার পাশাপাশি সরকারের ভাবমূর্তি নষ্ট হচ্ছে। বিসিকের অদক্ষ, অযোগ্য এবং সরকারী কাজে অবহেলা উদাসীনতা প্রদর্শনকারীদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়ার দায়িত্ব শিল্প মন্ত্রণালয়ের এবং সরকারের।