জুলাই-আগষ্ট বিপ্লবে সারাদেশের আওয়ামী লীগ নেতাদের কপাল পুড়লেও কপাল খুলেছে খাগড়াছড়ির স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা রেবিলিয়াম রোয়াজার। ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা পালিয়ে যাওয়ার পর পুনর্গঠিত অন্তর্বর্তীকালীন খাগড়াছড়ি পার্বত্য পার্বত্য জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান হিসেবে নিযুক্ত হয়েছেন এক সময়কার রাস্তার পাশে বসে মোমবাতি বিক্রেতা জিরুনা ত্রিপুরা। তার স্ত্রী চেয়ারম্যান হওয়ার সুবাদে এখন নিকটাত্মীয়দের নিয়ে পরিষদ চালাচ্ছেন তার স্বামী রেবিলিয়াম রোয়াজা।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর জিরুনা ত্রিপুরার সখ ছিল সংরক্ষিত নারী আসনে সংসদ সদস্য হওয়ার। এ কারণে তৎকালীন যোগাযোগ মন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরসহ আওয়ামী লীগের শীর্ষ পর্যায়ের নেতাদের বাসায় ফুলের তোড়া নিয়ে হাজির হয়েছিলেন।
চলতি বছরের গত ৭ নভেম্বর রাষ্ট্রপতির আদেশক্রমে পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সহকারী সচিব তাসলিমা বেগম স্বাক্ষরিত এক প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে জিরুনা ত্রিপুরা নামে এক অপরিচিত নারীকে চেয়ারম্যান এবং আরও ১৪ জন সদস্য নিয়ে পুনর্গঠন করা হয় অন্তর্বর্তীকালীন খাগড়াছড়ি পার্বত্য পার্বত্য জেলা পরিষদ।
এর তিনদিন পর ১০ নভেম্বর নব নিযুক্ত সদস্যদের নিয়ে দায়িত্ব গ্রহণ করেন চেয়ারম্যান জিরুনা ত্রিপুরা। জিরুনা ত্রিপুরা চেয়ারম্যান হিসেবে নিযুক্ত হওয়া এবং দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকেই তাকে নিয়ে জেলা জুড়ে বিস্তর সমালোচনা চলছে। এ নিয়ে বেশ অস্বস্তিতে রয়েছেন পরিষদের নব নিযুক্ত সদস্যসহ কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।
কাগজে কলমে জিরুনা ত্রিপুরা চেয়ারম্যান হলেও মূলত পরিষদ চালাচ্ছেন তার তার স্বামী জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা রেবিলিয়াম রোয়াজা। জেলা পরিষদে চেয়ারম্যানের পাশের একটি কক্ষ দখলে নিয়ে সেখানেই ঘাটি গেড়েছেন তিনি। চেয়ারম্যানের পাশের কক্ষে বসেই তার স্বামী রেবিলিয়াম রোয়াজা জেলা পরিষদের যাবতীয় কার্যক্রমসহ হস্তান্তরিত ২৪টি দপ্তরের কাজে হস্তক্ষেপ করছেন এবং প্রভাব খাটাচ্ছেন বলে অভিযোগ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের।
এ ছাড়াও ব্যক্তিগত ও পারিবারিক কাজে চেয়ারম্যানের জন্য বরাদ্দকৃত সরকারি গাড়ি পুলিশ প্রটোকল নিয়ে ব্যবহার করেন রেবিলিয়াম রোয়াজা। পাশাপাশি চেয়ারম্যান জিরুনা ত্রিপুরার সাথে সকল দফতরে সফর সঙ্গীও হচ্ছেন তিনি। শুধু খাগড়াছড়ি নয়, চেয়ারম্যানের দাফতরিক কাজে ঢাকায় পার্বত্য চট্টগ্রাম মন্ত্রণালয়ের জেলা পরিষদ ব্যবস্থাপনা সংক্রান্ত প্রশিক্ষণ ও কক্সবাজারে ইউএনডিপির বাৎসরিক পরিকল্পনা কর্মশালায়ও অংশ নিয়েছেন তার স্বামী রেবিলিয়াম রোয়াজা।
চেয়ারম্যান জিরুনা ত্রিপুরা জেলা পরিষদে নিযুক্ত হবার সাথে সাথেই তার স্বামীর নিকটাত্মীয়দেরও পুনর্বাসন করেছেন জেলা পরিষদে।খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদের চারটি ভবন এখন জিরনা ও তার স্বামী-স্বজনদের দখলে। দৈনিক একশ কেজির দুই বস্তা চাউল।
কাগজে কলমে না থাকলেও চেয়ারম্যান জিরুনা ত্রিপুরার রয়েছে চারজন ব্যক্তিগত সহকারী। যারা সকলেই তার স্বামীর নিকটাত্মীয়। এরমধ্যে সুমিনা ত্রিপুরাকে ব্যক্তিগত সহকারী, দেহরক্ষী হিসেবে পরিচিত দুইজন সহকারী অঞ্জুলাল ত্রিপুরা ও তরুণ ত্রিপুরা এবং জীতেন ত্রিপুরা নামে আরও একজনকে রেখেছেন পরামর্শক হিসেবে। যারা সার্বক্ষণিকভাবেই দখলে রেখেছেন জেলা পরিষদের কার্যালয়। মূলত স্বামীসহ তার নিকটাত্মীয়দের ইশারায় চলছে খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদের সকল কাজ। রাস্তায় চলাচলে চেয়ারম্যান জিরুনা ত্রিপুরার আগে-পিছে থাকে আরো দুটি গাড়ি।
এ ছাড়া জেলা পরিষদের রেস্ট হাউজে সদস্যদের জন্য কোনো আবাসনের ব্যবস্থা করা না হলেও চেয়ারম্যান তার স্বামীসহ চার সহকারীকে নিয়ে দখল করে নিয়েছেন জেলা পরিষদের পুরো রেস্ট হাউজ। দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে তাদের নিয়ে খাগড়াছড়ি সদরের কদমতলী এলাকার জেলা পরিষদের রেস্ট হাউজেই থাকেন তিনি। এ নিয়ে গণমাধ্যমে কিছু বলতে অনিহা প্রকাশ করলেও জেলা পরিষদের সদস্যদের মাঝে রয়েছে তীব্র অসন্তোষ।
এ প্রসঙ্গে জানতে খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান জিরুনা ত্রিপুরার মোবাইলে বেশ কয়েকবার কল করা হলেও তিনি তা রিসিভ করেননি।
তবে চেয়ারম্যান জিরুনা ত্রিপুরার স্বামী রেবিলিয়াম রোয়াজা বলেন, ‘আমি আমার স্ত্রীকে সহযোগিতা করার জন্যই জেলা পরিষদে যাই। এর বেশি কিছু নয়। আমি কোনো কর্মকর্তার ওপর প্রভাবও খাটাই না। এ ছাড়া যে চারজন সহকারী রয়েছে তাদের মধ্যে একজন আমার ছোট বোনের জামাই আর বাকীরা আমাদের পাড়া প্রতিবেশী হিসেবে সহযোগিতা করতে আসে।’
আওয়ামী লীগের সাথে সম্পৃক্ততার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘আমাদের পাড়ার চেয়ারম্যানের সাথে আওয়ামী লীগের বিভিন্ন কর্মসূচিতে গিয়েছিলাম। তবে কোনো পদ-পদবিতে ছিলাম না।