ঢাকা দুপুর ১:০৭ সোমবার, ১৩ই অক্টোবর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
আজকের সর্বশেষ সবখবর

কোটা বিরোধী আন্দোলনের প্রতি গণতন্ত্র মঞ্চের সমর্থন

পাঞ্জেরী ডেস্ক
জুলাই ৬, ২০২৪ ৯:২১ অপরাহ্ণ
Link Copied!

সারা দেশে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক এবং কোটাবিরোধীদের চলমান দুই আন্দোলনের প্রতি পূর্ণ সমর্থন ঘোষণা করেছে গণতন্ত্র মঞ্চ। গতকাল জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে গণতন্ত্র মঞ্চের উদ্যোগে ‘প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফরে সম্পাদিত দেশের স্বার্থবিরোধী বিভিন্ন সমঝোতা স্মারকের প্রতিবাদে’ আয়োজিত সমাবেশে মঞ্চের সমন্বয়কারী গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান জোনায়েদ সাকি এই ঘোষণার কথা জানান। পাশাপাশি গণতন্ত্র মঞ্চের সকল নেতা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও কোটাবিরোধী আন্দোলনকারীদের প্রতি তাদের সমর্থন ব্যক্ত করেন। সমাবেশের পর বিক্ষোভ মিছিল পুরানা পল্টনে মোড়ে গিয়ে শেষ হয়। নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, সরকারের একটাই লক্ষ্য ক্ষমতায় থাকবে যেকোনো প্রকারে, যেকোনো ভাবে। গুণ্ডাবাহিনী লাগবে, আওয়ামী গুণ্ডা দিয়ে চলে না। অতএব, পুলিশকে লাঠিয়াল বাহিনী বানাচ্ছে। সেজন্যই বেনজীর (সাবেক পুলিশ প্রধান) একের পর এক সম্পত্তি দখল করেছে, হিন্দু-মুসলমান মানে নাই। এসব কিছুর প্রেক্ষিতে আমরা একটাই কথা বলতে চাই, আমরা অনেক দিন ধরে বলছি, এই সরকারের সঙ্গে আমাদের কোনো আপস হবে না। এই সরকারকে আমরা কোনো অনুমোদন দেবো না।
এই সরকারের বিরুদ্ধে আমাদের লড়াই চলবে। তিনি বলেন, মাঝে-মধ্যে অনেকে বলেন, অনেক দিন ধরে লড়াই করছেন পারলেন না তো। আমি বলি, কাল পারিনি, আজ পারবো, আজ পারিনি, কাল পারবো, লড়াইটা চলবে- যতদিন পর্যন্ত তাদের পরাস্ত করতে না পারি। এখানে কোনো ক্ষমা নাই, আপস নাই। দুর্নীতিবাজদের, চরিত্রহীনদের জরবদখলকারীদের সঙ্গে গণতন্ত্রকামী মানুষেরা আপস করবে না।
সবার কাছে আমার অনুরোধ লড়াই ছাড়া মুক্তি পাবেন না। বাঁচার জন্য এই লড়াই আপনাদের সবাইকে করতে হবে। মান্না বলেন, দুঃখের বিষয় হলো এখানে যা কিছু বলেন না কেনো সরকারের কানে তো বাতাস যাবে না। প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, ট্রানজিট দিয়ে কি অন্যায় করলাম? আমি ওইরকম করে যদি পাল্টা প্রশ্ন করি ট্রানজিট দিয়ে কি পেলেন? আগে বলা হয়েছিল আমাদের ট্রানজিট দিলে অনেক টাকা-পয়সা পাওয়া যাবে, ওরা (ভারত) মাশুল দেবে, ট্রানজিট ফি দেবে, আমাদের দেশ সেই টাকায় সিঙ্গাপুর, ব্যাংককসহ অন্যান্য উন্নত দেশ হয়ে যাবে। বহুবার আমরা জানতে চেয়েছি, এই পর্যন্ত ট্রানজিট খাতে আমাদের ইনকাম কতো? জবাব নাই। বাজেটটা পুরো পড়ে দেখেন আমাদের সরকার কতো ইনকাম করছে, তার মধ্যে ট্রানজিটের মাশুলের কথা নাই। তিনি বলেন, এবার যেটা করলো সেটা আপনি আপনার নিজের দেশকে বিপদে ফেললেন। সরকার তো স্বীকার করে না, বলে না। সংসদের মধ্যে বিদেশের সঙ্গে সম্পাদিত চুক্তি বা মেমোরেন্ডাম (সমঝোতা স্মারক) এটা উপস্থাপনের নিয়ম আছে, আপনারা সেটা উপস্থাপন কখনো করেননি। আমরা পরিপূর্ণভাবে জানিই না, সম্পাদিত চুক্তির বিবরণগুলো কি কি? ‘ভারতের পত্রিকায় লিখেছে, ভারতের কোনো নেতা লিখেছেন এই যে, করিডোর বা ট্রানজিট যেটা দেয়া হলো নতুন করে রেলপথ স্থাপনের মধ্যদিয়ে ভারত থেকে সেদেশের ট্রেন সরাসরি এসে বাংলাদেশে ঢুকবে, আবার সেভেন সিস্টারের কাছে ভারতের মধ্যে ঢুকবে, এটা চিকেন নেট, বুঝে দেখেন, চিকেন নেট ভারতের একমাত্র জায়গায় যেটা দিয়ে সেভেন সিস্টারে যাওয়া যায়।
সেভেন সিস্টারের পর সব কয়টা সিস্টারে বিদ্রোহী, কোনো কোনো বিদ্রোহী এরকম শক্তিশালী যে তারা একদম সরাসরি ভারতের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বে আঘাত করে। চিকেন নেটের পাশে ডোকলাম সেখানে ভারত-চীনের বিদ্রোহ হয়েছিল, তাদের সীমানা, তাদের বাউন্ডারি নিয়ে, জায়গা-জমি নিয়ে সেই বিতর্কেরও নিষ্পত্তি হয়নি। এর কারণে তারা (ভারত) এই জায়গাকে নিরাপদ রাখতে চায়, তাদের সিকিউরিটির সমস্যার জন্য বাংলাদেশ দিয়ে ট্রেন নিয়ে যাচ্ছে তারা। বাংলাদেশের বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বলেন, বাংলাদেশের লাভটা কি? এর আগে আপনি ট্রানজিট দিয়েছেন, করিডোর দিয়েছেন। সেখানে আমি প্রধানমন্ত্রীকে পরিষ্কার জিজ্ঞেস করতে চাই যে, আপনি যে ট্রানজিট-করিডোর দিয়েছেন সেখানে বাংলাদেশের লাভের জায়গাটা কি? আমাদের জাতীয় স্বার্থটা কি, কোনো কিছু বলতে পারবেন। সরকারের কোনো মন্ত্রীরা, স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী আপনি কি বলতে পারবেন, এই পর্যন্ত ট্রানজিট বা করিডোর দিয়েছেন তাতে বাংলাদেশ অর্থনৈতিকভাবে কীভাবে লাভবান হয়েছে, বাণিজ্যিকভাবে কীভাবে লাভবান হয়েছে, নিরাপত্তার দিক থেকে কীভাবে লাভবান হয়েছে? কোনোভাবেই বাংলাদেশ লাভবান হয় নাই। এর আগে জোনায়েদ সাকি বলেন, সরকার এক মরণ খেলায় নেমেছে। মানুষকে বন্দি করবার জন্য হত্যা করছে, গুম করছে, দেশ ধ্বংষ করছে, ক্ষমতা তারা ছাড়বে না। এই যে ছাত্রছাত্রীরা নেমেছে কোটা সংস্কারের জন্য, এই যে শিক্ষকরা আন্দোলন নেমেছে। এসব আন্দোলন ফুঁসে উঠছে বলে এখন আবার ছাত্রলীগের গুণ্ডাবাহিনী, হেলমেট বাহিনী হলে হলে পাহারাদার বসিয়েছে এবং আন্দোলনটাকে দমন-পীড়ন করে ধ্বংস করতে চাইছে। আমরা পরিষ্কার করে বলতে চাই, সমস্ত আন্দোলন আমাদের। এই ছাত্রদের আন্দোলনে বিরোধী দল কোনো ষড়যন্ত্র করছে না। আমরা পরিষ্কারভাবে ছাত্রদের আন্দোলনকে সমর্থন জানাই, শিক্ষকদের আন্দোলনকে সমর্থন জানাই। এই শিক্ষক আমাদের, এই ছাত্র আমাদের, এই শ্রমিক আমাদের, এই দেশের কৃষক আমাদের, এই দেশের জনগণ আমাদের, তাদের প্রতিটি আন্দোলনে আমরা আছি, থাকবো। ভাসানী অনুসারী পরিষদের আহ্বায়ক বীর মুক্তিযোদ্ধা শেখ রফিকুল ইসলাম বাবলুর সভাপতিত্বে সমাবেশে রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক হাসনাত কাইয়ূম, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জেএসডি) সিনিয়র সহ-সভাপতি তানিয়া রব প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।

বিনা অনুমতিতে এই সাইটের সংবাদ, আলোকচিত্র অডিও ও ভিডিও ব্যবহার করা বেআইনি।