রাজধানীর ফার্মগেটে অবস্থিত কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরে কর্মচারী নিয়োগে ব্যাপক আর্থিক লেনদেনের অভিযোগ উঠেছে।
ফ্যাসিবাদের দোসরদের ঘুষ বাণিজ্যের গোমর ফাঁস হওয়ায় খামার বাড়িতে কর্মচারীদের মাঝে বিরাজ করছে চাপা ক্ষোভ ও উত্তেজনা। বিশ্বস্ত সূত্র জানায় কর্মচারীদের কাছ থেকে ফ্যাসিবাদের সাবেক ডিজি বাদল চন্দ্র সিন্ডিকেটের বিশ্বস্ত সহচর তৎকালিন উপ-পরিচালক আব্দুল হাই এবং শহীদুল ইসলামের নেতৃত্বে শত কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়া হয়েছে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের রাজস্ব খাতভূক্ত ৩৫ টি স্থায়ী এবং ৩টি অস্থায়ী পদে ড্রাইভার নিয়োগের জন্য গত ২৮ ফেব্রুয়ারি বিজ্ঞপ্তি জারি করা হয়। ড্রাইভার ছাড়াও ৯৯ টি ব্যক্তিগত সরকারি পদের অনুকূলেও বিজ্ঞপ্তি জারি করে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর (ডিএই)। নিয়োগ প্রক্রিয়া তিনটি ধাপে অনুসরণ করার বিধিবিধান থাকলেও গোপনে পরীক্ষার খাতায় ম্যানুপুলেশনের অভিযোগ উঠেছে। পছন্দের প্রার্থীদের কৌশলে লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণের অভিযোগ প্রকট আকার ধারণ করেছে। যারা সর্বশেষ পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হবেন তা আগে থেকেই নির্ধারণ করা রয়েছে বলে সূত্র জানায়। এ জন্য তৎকালীন মহাপরিচালক বাদল চন্দ্র প্রত্যেক গাড়ি চালকের কাছ থেকে ১০ লক্ষ টাকা করে উৎকোচ গ্রহণ করেন। এ ক্ষেত্রে তৎকালিন প্রশাসনের উপ পরিচালক আব্দুল হাই এবং শহীদুল ইসলাম মূখ্য ভূমিকা পালন করেন। সূত্র জানায়, সাবেক মহাপরিচালক বাদল চন্দ্রের বিশ্বস্ত কর্মকর্তা ছিলেন আব্দুল হাই এবং শহীদুল ইসলাম। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের বেশ কয়েকটি নির্ভরযোগ্য সূত্র দৈনিক পাঞ্জেরীকে বলেন, লিখিত পরীক্ষা ছিল লোক দেখানো। যে কারণে মেধাবী ও দক্ষ গাড়ি চালকগণ পিছিয়ে পড়েন। পরীক্ষায় অনেকেই ভালো ফলাফল করলেও কৌশলে তাদেরকে অকৃতকার্য দেখানো হয়েছে। মোট অংকের অর্থের কাছে তাদের যোগ্যতা ও মেধা পরাজিত হয়েছে বলেও অনেক গাড়ি চালকগণ ক্ষোভ প্রকাশ করেন গণমাধ্যমের কাছে। বিশ্বস্ত সূত্র জানায়, যাদের নিয়োগ দেওয়া হবে তাদের কাছ থেকে লিখিত পরীক্ষার পূর্বেই ১০ লাখ টাকা করে হাতিয়ে নেন ডিজি বাদল চন্দ্র ও তার সিন্ডিকেট উক্ত দুই কর্মকর্তা। ডিএই সূত্র জানায়, গাড়ি চালকদের লিখিত পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়েছে গত ৫ জুলাই এবং ব্যক্তিগত সহকারীদের লিখিত পরীক্ষা নেওয়া হয়েছে গত ১২ জুলাই। এতে গাড়ি চালক পদে পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেন ৩৯৭৭ জন এবং উত্তীর্ণ হন ১৪৫০ জন। আর ব্যবহারিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণের সংখ্যা ছিল ৪৭৮ জন। তবে এ থেকে মৌখিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণের পর স্থায়ী ও অস্থায়ী পদে ৩৮ জন গাড়ি চালককে নিয়োগ দেওয়া হবে। আর তাদের কাছ থেকেই ১০ লাখ টাকা করে মোটা অংকের অর্থ হাতিয়ে নেওয়া হয়েছে আগেই। ডিএই সূত্র জানায়, তিনটি ধাপে নামকাওয়াস্তে পরীক্ষা সম্পন্নের পদ্ধতি অনুসরণ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের দুর্নীতিবাজ প্রশাসন ৩৮ জন গাড়িচালককে নিয়োগ দিবেন। যাদের কাছ থেকে আগেই অর্থ হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। বর্তমানে নিয়োগ প্রক্রিয়া চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। এতে করে দক্ষ ও মেধাবী গাড়ি চালকদের মধ্যে একদিকে যেমন বিরাজ করছে হতাশা, তেমনি অন্যদিকে তীব্র ক্ষোভে তারা ফেটে পড়ছেন। তারা এই নিয়োগ প্রক্রিয়া বাতিলের জোর দাবি জানিয়েছেন। সূত্র আরো জানায়, উক্ত ৩৮ জন গাড়ি চালকের কাছ থেকে ৩ কোটি ৮০ লাখ টাকা ঘুষ বাণিজ্য আদায় করেন ফ্যাসিবাদের অন্যতম দোসর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তৎকালিন মহাপরিচালক বাদল চন্দ্র ও তার অন্যতম দোসর আব্দুল হাই এবং শহীদুল ইসলাম। অপরদিকে ব্যক্তিগত সরকারি পদে ৯৮৩৩ জন আবেদন করেন। এর মধ্যে ম্যানুপুলেশনের মাধ্যমে লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ দেখানো হয় ৩২৯ জনকে। অন্যদিকে ব্যবহারিক পরীক্ষায়ও উত্তীর্ণ দেখানো হয় ৯৩ জনকে। সূত্র জানায়, এদের কাছ থেকেও ১০ লাখ করে আদায় করা হয়েছে অত্যন্ত গোপনীয়তার সঙ্গে। ডিএই’র দায়িত্বশীল কয়েকজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করা শর্তে দৈনিক পাঞ্জেরীকে বলেন, “নিয়োগ প্রক্রিয়ার সবকিছু ছিল লোক দেখানো। আগে থেকেই সবকিছু ঠিকঠাক করা রয়েছে। এখন মাত্র চূড়ান্ত প্রক্রিয়া। এখানে কোটি কোটি টাকার খেলা হয়েছে। বলা যায় শত কোটি টাকার বাণিজ্য করেছে তৎকালীন ডিএই প্রশাসন।” এ নিয়ে চলছে ডিএইতে চলছে তুলকালাম কাণ্ড। জুলাইয়ে ফ্যাসিবাদ বিরোধী আন্দোলন যখন তুঙ্গে, সেই সুযোগে বাদল চন্দ্র সিন্ডিকেট লোক চক্ষুর অন্তরালে অত্যন্ত গোপনীয়তার সঙ্গে এই অপকর্মটি করেন বলে সূত্র নিশ্চিত করেছে। উক্ত ২ পদে এখন নিয়োগ প্রক্রিয়া প্রায় চূড়ান্ত। বিষয়টি নিয়ে ডিএইতে চলছে তীব্র উত্তেজনা ও ক্ষোভ। যে কারণে ভুক্তভোগী ড্রাইভারগণ ও ব্যক্তিগত সরকারি পদে ক্ষতিগ্রস্তরা উক্ত ২ পদে নিয়োগ প্রক্রিয়া বাতিলের দাবি তুলেছেন। এছাড়াও গত ১৫ বছরে ডিএইতে প্রায় ৪ হাজার কর্মচারী নিয়োগ দেয়া হয়েছে। এখানেও শত কোটি টাকার বাণিজ্য করেছে ফ্যাসিবাদের দোসররা। এ ব্যাপারে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সাবেক মহাপরিচালক বাদল চন্দ্রের সঙ্গে তার মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলেও বক্তব্য পাওয়া যায়নি। অপরদিকে ডিএই প্রশাসনের তৎকালিন উপ-পরিচালক আব্দুল হাই এবং শহীদুল ইসলামের মোবাইল ফোনে কয়েকবার যোগাযোগ করেও তাদের বক্তব্য পাওয়া যায়নি।