বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প কর্পোরেশনের (বিসিক) আয়োজনে সোমবার (১০ জুন ) রাজধানীর প্যানপ্যাসিফিক সোনারগাঁও হোটেলের ওয়েসিস মিলনায়তনে উন্নয়নের অগ্রযাত্রায় রূপকল্প ২০৪১ বাস্তবায়নে বিসিকের ভূমিকা’ শীর্ষক আলোচনা সভা এবং কারুশিল্প পুরস্কার ১৪৩০’প্রদান অনুষ্ঠান সফলভাবে সম্পন্ন হয়েছে।
অনুষ্ঠানে শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন প্রধান অতিথি এবং বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন শিল্পমন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব জাকিয়া সুলতানা ।মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ইস্টওয়েস্ট ইউনিভার্সিটির মুখ্য উপদেষ্টা ও প্রতিষ্ঠাতা উপাচার্য এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্ণর ড. মোহাম্মদ ফরাস উদ্দিন। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বিসিকের চেয়ারম্যান সঞ্জয় কুমার ভৌমিক।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে শিল্পমন্ত্রী বলেন, রূপকল্প ২০৪১ বাস্তবায়নে ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্পের অবদান খুবই গুরুত্বপূর্ণ।বিসিক এক্ষেত্রে কার্যকর ভূমিকা পালন করছে, যা দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নকে ত্বরান্বিত করছে। বিসিকের উদ্যোগে দেশের কারুশিল্পের উন্নয়ন ও আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতিযোগিতায় সক্ষমতা বৃদ্ধি পাবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
জাকিয়া সুলতানা বিসিকের সাফল্যের ভূয়সী প্রশংসা করে বলেন, বিসিকের উদ্যোগে দেশের কারুশিল্পীদের মধ্যে তাঁদের কাজের দক্ষতার স্বীকৃতি স্বরুপ কারুশিল্প পুরস্কার প্রদান করা হয়েছে।এই পুরস্কার কারুশিল্পীদের উৎসাহ প্রদানের পাশাপাশি আবহমান বাংলার সৃজনশীল কারুশিল্পের ঐতিহ্যকে ধরে রাখার প্রয়াসকে ত্বরান্বিত করবে।
মূলপ্রবন্ধে ড. মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিন বলেন, শিল্পায়নে কর্মসংস্থান ও জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জন অব্যাহত ভাবে জরুরী।আনুমানিক ৪০/৪২ লাখ সিএমএস উদ্যোক্তাকে চিহ্নিত করে বিসিক এর অধীনে পর্যায় ক্রমে প্রকল্পমান, প্রকল্পতৈরী, বাজারসমীক্ষা, অর্থায়ন (সহজশর্তে) প্রচেষ্টা ও দেশে-বিদেশে বাজার জাতকরণ এবং মূল্যায়ন ও সমীক্ষা সম্পর্কে বিশ্ববিদ্যালয় সমূহে যুক্তরাষ্ট্রের আদলে ইন কিউবেটর স্থাপন করা সমীচিন হবে।
সভাপতির বক্তব্যে বিসিক চেয়ারম্যান বলেন, বঙ্গবন্ধুর হাতে গড়া প্রতিষ্ঠান বিসিক উদ্যোক্তা সৃষ্টি ও কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টির মাধ্যমে ক্ষুধা ও দারিদ্র্য মুক্ত স্বপ্নের সোনারবাংলা গড়া এবং প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ২০৪১ সালে শিল্পসমৃদ্ধ স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে চলেছে।
অনুষ্ঠানে আলোচক হিসেবে দৈনিক ভোরের কাগজের সম্পাদক শ্যামল দত্ত এবং মোঃ হাফিজুর রহমান, সদস্য, বাংলাদেশ প্রতিযোগিতা কমিশন তাদের মূল্যবান মতামত প্রদান করেন। আলোচক গণক্ষুদ্র ও কুটির শিল্পের উন্নয়নে বিসিকের ভূমিকার প্রশংসা করেন এবং ভবিষ্যতে এর আরও উন্নতির উপর গুরুত্বারোপ করেন।
অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিত অতিথিদের মধ্যে বিভিন্ন উদ্যোক্তা সংগঠনের প্রতিনিধিগণ, দেশী-বিদেশী বিভিন্ন চেম্বার অফ কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রির প্রতিনিধিগণ, আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশের নবনিযুক্ত কমার্শিয়াল কাউন্সিলরগণ, বাংলাদেশে নিযুক্ত বিভিন্নদেশের কূটনীতিক ও উন্নয়ন সহযোগী সংস্থার প্রতিনিধিগণ, বিভিন্ন প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ার প্রতিনিধিগণ উপস্থিত ছিলেন।
উন্মুক্তআলোচনায়, উপস্থিত অতিথিরা বিসিকের কার্যক্রম ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে মতামত ব্যক্ত করেন।এরপর ‘কারুশিল্প পুরস্কার ১৪৩০’প্রদান করা হয়, যা দেশের কারুশিল্পীদের মধ্যে সৃজনশীলতা ও উদ্ভাবনী ক্ষমতাকে স্বীকৃতি প্রদান করেছে। ‘কারু শিল্পপুরস্কার -১৪৩০’উপলক্ষে কারুশিল্পীদের কাজের দক্ষতা, গুনগতমান ও ঐতিহ্যের ধারাবাহিক তার স্বীকৃতি স্বরূপ ১জন কারুশিল্পীকে শ্রেষ্ঠ কারুশিল্পী হিসেবে কারুরত্ন এবং ৯জন কারুশিল্পীকে দক্ষ কারুশিল্পী হিসেবে কারুগৌরব পুরস্কারে ভূষিত করা হয়।এ বছর শ্রেষ্ঠ কারুশিল্পী হিসেবে শোলাশিল্পের জন্য কারুরত্ন পুরস্কার পেয়েছেন ঝিনাইদহের গোপেন্দ্রনাথ চক্রবর্ত্তী।বিজয়ী প্রত্যেককে পুরস্কার হিসেবে সনদপত্র, ক্রেস্ট এবং শ্রেষ্ঠ কারুশিল্পী (কারুরত্ন) কে ৫০হাজার টাকার ও দক্ষ কারুশিল্পীদের (কারুগৌরব) প্রত্যেককে ৩০ হাজার টাকার চেক প্রদান করা হয়।পুরস্কার প্রাপ্ত ব্যক্তিবর্গ তাদের অনুভূতি প্রকাশ করেন এবং বিসিকের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান।অনুষ্ঠান স্থলে হস্ত ও কারুশিল্পপণ্যের প্রদর্শনীর ব্যবস্থা ছিল যেখানে জামদানি, শতরঞ্জি, শীতলপাটি, পাটজাত, মণিপুরীশাড়ি, চামড়াজাত, খাদ্যজাত, বাঁশ-বেতজাত ইত্যাদি পণ্যের ১৫টি স্টলে বিসিকের উদ্যোক্তারা তাদের উৎপাদিত পণ্য সমূহ প্রদর্শনকরেন।
উক্ত আলোচনা সভা ও পুরস্কার প্রদান অনুষ্ঠান দেশের কারুশিল্প উন্নয়নে এবং শিল্পীদের মধ্যে উদ্ভাবনী চেতনা ও সৃজনশীলতা বৃদ্ধিতে অনুপ্রাণিত করবে বলে সকলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন।পরিশেষে, নৈশভোজের মাধ্যমে অনুষ্ঠান সমাপ্ত হয়।